কুশিয়ারার ও কালনী নদী থেকে আবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

মোঃ মোজাহিদ মিয়া, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:


হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালু খেকো চক্রের সিন্ডিকেট। এবার রাতের আঁধারে নয়  বরং প্রকাশ্য দিবালোকে কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে আবারও ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে চলছে বালু উত্তোলন। প্রকাশ্য দিবালোকে কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে করে একদিকে  সরকার যেমন হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব অপরদিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের কামালপুর, রাহেলা,  বদরপুর,নজরাকান্দা ও সৌলরী সহ প্রায় বেশ কটি গ্রাম সহ ফসলী জমি নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ার আশংখা করছে এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কাকাইলছেওয়র সাহানগর, নজরাকান্দা, উমেদনগর, রুদ্রনগর সহ কয়েকটি গ্রামের  প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ও ফসলিজমি। গতকাল শুক্রবার বিকাল অনুমানিক ৫ টায় সরজমিনে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার নৌ-টার্মিনাল এলাকার বাঁশ মহাল সংলগ্ন কুশিয়ারার কালনী নদীর তীরে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।

জানাযায়,  হবিগঞ্জের ভাটি এলাকার বন্দর নামে খ্যাত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সীমানার মধ্যস্হল দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারার কালনী নদীর উত্তর -পশ্চিম তীরে ইটনা উপজেলা এবং  পুর্ব-দক্ষিণ পাড়ে  আজমিরীগঞ্জ  উপজেলার অংশ। কুশিয়ারার কালনী নদীতে  রাতের আঁধারে একটি বড় ড্রেজার মেশিন ইটনার অংশে নোঙ্গর করা থাকলেও দিনের বেলা পু্র্ব- দক্ষিন তীরের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সীমানা থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন। উত্তলনকৃত বালু প্রতি ঘনফুট ৮ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এতে সরকার যেমন হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব অপরদিকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ও ফসলিজমি  নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায়,   গত জুলাই মাসের ১৫ তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সংশিষ্টরা নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ভাঙ্গন রোধে  প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকার জিও ব্যাগ বরাদ্ধ দেয়া হয়। 

সূত্র জানায়, বিগত ২০১৮ সালের ২৬ শে নভেম্বর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ  নাঈমা খন্দকার একই জায়গা অর্থাৎ কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার ইদ্রিস মিয়ার পুত্র নিয়ামত উল্ল্যাহকে বালু - মাটি ব্যবস্হাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও  ড্রেজার মেশিনের যন্ত্রাংশ পুড়িয়ে দেন । এ ছাড়া বিগত ২০২০ সালের ১২ই ডিসেম্বর  সাবেক সহকারী কমিশনার (ভুমি) উত্তম কুমার দাশ প্রায় ১৮ একর চর অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করেন। 

কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল শুক্রবার সরজমিনে দেখা যায়, বিকাল অনুমানিক ৫ টায় উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ১ কিলোমিটারের দুরে আবারও বালু খেকো চক্রটি  সক্রিয় হয়ে  উঠায় জনমনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে। 

অপর একটি সুত্রে জানায়, কিশোরগঞ্জের  ইটনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক খলিলুর রহমানের ছোট ভাই  মৃগা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভুট্টো মিয়া সহ একটি প্রভাবশালী চক্র এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে  জড়িত। 

এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) শফিকুল ইসলাম জানায়, অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের অংশটি আজমিরীগঞ্জ সীমানার বাহিরে। বাঁশ মহাল মসজিদ পর্যন্ত আজমিরীগঞ্জের সীমানা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অংশটি ইটনা উপজেলার অবস্হিত। তাই এ বিষয়টি ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। 

এদিকে মৃগা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভুট্টো মিয়ার মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে উনার মুটোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী জানায়, আজমিরীগঞ্জের সীমানা রাহেলা গ্রামের আরো অনেক পরে। তৎকালীন সিলেট জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ডিমারগেশন চুক্তি অদ‍্যাবধি পর্যন্ত বহাল আছে।প্রয়োজনে কাগজ দেখানো হবে৷


শেয়ার করুন