হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে গাছ পাচার থামছেই না

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে দেদারসে কেটে নেয়া হচ্ছে সামাজিক বনায়নের বৃক্ষ। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংরক্ষিত বনের গাছ পাচার। আশংকাজনক হারে গাছ পাচারের মতো অপতৎরতা বৃদ্ধি পেলেও বন বিভাগের লোকজন তা রোধ করতে পারছেন না। তারা চোরদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। চুনারুঘাটে গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন সড়কের পাশে সৃজিত প্রায় ৫ শ সিএফটি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গাছ পাচারকারী চক্রকে সনাক্ত করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না বন বিভাগসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।


চুনারুঘাটের ছনবাড়ি বিটের গাতাবাড়ি এলাকার সৃজিত সামাজিক বাগান থেকে অবাধে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনদস্যুরা। সংঘবদ্ধ গাছ চোরেরা অস্ত্রের মুখে লুটপাট করছে এসব মূল্যবান গাছ। উপকারভোগীরা জানান, এলাকার ৩০ জন দরিদ্র মানুষ বনবিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০১৫-১৬ সালে গাতাবাড়ি টিলায় ৩০ হাজার গাছের চারা রোপণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে থাকেন। গাছগুলো বড় হয়ে উঠলে চোরদের নজর পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বনদস্যুরা রাতের আঁধারে দলবদ্ধ হয়ে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে চুনারুঘাট-নালমুখ সড়ক, চুনারুঘাট-রাণীগাঁও সড়ক, চুনারুঘাট-বাল্লা সড়ক, আমুরোড বাজার- আমু চা বাগান সড়ক, নালমুখ-পীরেরগাঁও সড়ক, গাজীগঞ্জ-সাটিয়াজুড়ি সড়ক, চুনারুঘাট-শাকির মোহাম্মদ সড়ক, শায়েস্তাগঞ্জ-দেউন্দি সড়কসহ ২০/২৫ টি সড়কের পাশে সৃজিত প্রায় লক্ষাধিক সিএফটি মুল্যবান বৃক্ষ কেটে পাচার করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এসব অপকর্ম চালাচ্ছে চোরেরা। সাধারণ মানুষজন বলছেন, আগে আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় ছিলো গাছচোরেরা। এখন শরীরে লাগিয়েছে সমন্বয়ক ট্যাগ। এরা বরাবরই রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টায়।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনায়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চুনারুঘাটের সন্তান। গত মাসে তিনি চুনারুঘাট সফরে এসে গাছ চুরি, বালু চুরি ঠেকাতে প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু গাছ কাটা বন্ধ হচ্ছে না। গত ১০ ফেব্রুয়ারী চুনারুঘাট- চান্দপুর চা বাগান অংশ থেকে ১৩ টি বৃক্ষ কেটে নিয়েছে চোর চক্র। চুনারুঘাটে বন বিভাগের বিশেষ টহল বাহিনী থাকার পরও গাছ পাচার চলছে সমানতালে। এদিকে চুনারুঘাটে সংরক্ষিত বন থেকে গাছ পাচার অব্যাহত রয়েছে। রাতের আঁধারে কেটে নেয়া হচ্ছে বনের গাছ। চুনারুঘাটে প্রায় ৪০টি স’ মিলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গাছ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রায় সবকটি স’ মিলের মালিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। বন বিভাগ সুত্র জানান, অধিকাংশ স মিল-এর বিরুদ্ধে বন বিভাগের মামলা রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টে রিট করে স’ মিল মালিকরা তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। প্রত্যক্ষতদর্শীরা জানান, চুনারুঘাটে প্রতিটি স মিলের সামনে স্তুপ করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত সিএফটি গাছ।
চুনারুঘাটে বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান বলেন, গাছ পাচার রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বন বিভাগ। তারা গত মাসে ৮৪ ঘনফুট অবৈধ গাছ আটক করে ৫ টি মামলা করেছেন।

শেয়ার করুন