নদীর উপর কাঁচা বাঁধ, চরম দুর্ভোগে আজমিরীগঞ্জ, মিঠামঈনের হাজার হাজার মানুষ

শেখ শিহাব আল মাহমুদ, বিশেষ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার রসুলপুর গ্রাম এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বাহেরচর গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একমাত্র পথ বছিরা নদীর উপর নির্মিত একটি কাঁচা বাঁধ। নদীর তলদেশে মাটি ফেলে এই বাঁধ তৈরি করা হয়েছে, যার মাঝে পানি প্রবাহের জন্য কিছু জায়গা খোলা রাখা হয়েছে। তবে এই অস্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল, ফলে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু ও নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।


এই দুর্ভোগ শুধু আজমিরীগঞ্জ ও মিঠামইন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কুমড়ী, বিথঙ্গলসহ আশপাশের এলাকার মানুষকেও যাতায়াতের জন্য নদীপথের ওপর নির্ভর করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে নৌকার চলাচল থাকলেও শুকনো মৌসুমে পানি নেমে যাওয়ায় এই কাঁচা বাঁধই যাতায়াতের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এটি কর্দমাক্ত হয়ে যায় এবং চলাচল করতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।


আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও বাজার এ অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন হাট-বাজার। প্রতিদিন বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ এবং মিঠামইনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও ব্যবসায়িক কাজে এই বাজারে আসে। বিশেষ করে মিঠামইন থেকে প্রচুর গরু এনে এখানকার গরুর হাটে বেচাকেনা করা হয়। কিন্তু যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই কাঁচা বাঁধ, যা নিরাপদ এবং টেকসই কোনো সমাধান নয়।


স্থানীয় বাসিন্দা ইমাদ উদ্দীন আপন বলেন, "রাত দশটার পর যদি কোনো জরুরি রোগী হাসপাতালে নিতে হয়, তখন এই নদী পার হওয়া সম্ভব হয় না। তাই দ্রুত একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।"


এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকার এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। যেহেতু এটি দুই উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত, তাই জনপ্রতিনিধিরাও দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেউই এগিয়ে আসছেন না, ফলে বছরের পর বছর ধরে এখানকার মানুষ একই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।


স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এলাকাবাসী বলেন, "এই সেতুটি বাস্তবায়ন হলে শুধু আজমিরীগঞ্জ-মিঠামইন নয়, বানিয়াচংসহ আশপাশের অনেক মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হবে। জনপ্রতিনিধিদের একটু সদিচ্ছা থাকলেই এটি সম্ভব।"


দুই পাড়ের বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা আশ্বাস দেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উত্থাপন করা হবে এবং সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কবে নাগাদ দুই জেলার মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়।


শেয়ার করুন