Previous
Next

সর্বশেষ

শাল্লায় অফিসের ভেতরেই ঝুলন্ত অবস্থায় অফিস সহায়ক

শাল্লায় অফিসের ভেতরেই ঝুলন্ত অবস্থায় অফিস সহায়ক

সুনামগঞ্জের শাল্লায় অফিসের ভেতরেই ঝুলন্ত অবস্থায় পিপলু সরকার (৩৫) নামের এক যুবক লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত রয়েছে বলে জানা গেছে। ৭ জুলাই সোমবার রাত আনুমানিক আটটায় নিজ অফিসের ভেতরে ওয়াশরুমের দরজায় গায়ের শার্ট দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় থাকে উদ্ধার করা হয়। 


স্থানীয়রা জানান, পিপলু সরকারের স্ত্রী দিনের বিকাল তিনটা থেকে ফোন দিয়েও তাকে পাননি। তারপর তার স্ত্রী পিপপু সরকারের এক বন্ধুকে ফোন দিলে সে অফিসে গেলে পিপলু সরকারকে ঝুলানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে লোকজনকে খবর দেন।


শাল্লা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা (অ:দা) সন্দীপন মজুমদার বলেন, আমি কোনকিছুই জানি না। তবে অফিশিয়ালি কোন বিষয় নয়। পারিবারিক কোন কারনে সে এমনটা করতে পারে। সম্ভব হলে আমি এখনই শাল্লা যাবো বলে জানান তিনি। 


শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, তার নিজের গায়ের শার্ট দিয়েই অফিসে ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া চলছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, বিষয় কি আমি জানি না। ঘটনা শোনার পর আমি গিয়ে দেখে এসেছি। পুলিশ এসে আইনী প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

নাসিরনগরে  গাঁজা সেবনের দায়ে এক চা দোকানির  ৩ মাসের জেল

নাসিরনগরে গাঁজা সেবনের দায়ে এক চা দোকানির ৩ মাসের জেল

নাসিরনগর প্রতিনিধি : 

নাসিরনগরে ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ অসিত দেব (৫০) নামে এক মাদকসেবীকে ইউএনও'র উপস্থিতিতে  আটক করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার  রাতে নাসিরনগর সিএনজি স্ট‍্যান্ড সংলগ্ন চায়ের দোকানে অভিযান চালিয়ে  গাঁজাসহ তাকে আটক করা হয়।

অসিত দেব  নাসিরনগর সদরের  মৃত সরাজ দেবের ছেলে।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরীন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার  রাতে  অভিযান চালিয়ে থানা পুলিশের সহায়তায় ঐ যুবককে গাজাঁসহ আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করে আসামিকে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

কুলাউড়ায় উপজেলার নাফিসা আনজুম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মশাল মিছি

কুলাউড়ায় উপজেলার নাফিসা আনজুম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মশাল মিছি

কুলাউড়া প্রতিনিধি : 

কুলাউড়া উপজেলার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী নাফিসা আনজুম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং হত্যাকারী ঘাতক জুনেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।


গতকাল শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় কুলাউড়া ডাকবাংলো প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় মশাল মিছিলটি। শহরের দক্ষিণবাজার ও স্টেশন চৌমুহনী এলাকা পদক্ষিণ শেষে মিছিলটি পুনরায় ডাকবাংলোতে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, “এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড গোটা সমাজকে হতবাক করেছে। ঘাতক জুনেলের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ করার সাহস না পায়।”


মিছিলে অংশ নেন কুলাউড়ার সর্বস্তরের শিক্ষার্থী, সাধারণ জনতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আনজুমের পরিবারের সদস্যরা। তারা সবাই এক কণ্ঠে ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।


উল্লেখ্য, সম্প্রতি কুলাউড়ার শ্রীপুর এলাকায় মেধাবী ছাত্রী নাফিসা আনজুম নির্মমভাবে খুন হন। এই ঘটনায় জেলাজুড়ে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আনজুম হত্যার বিচার ও ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।


মহিপুরে রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

মহিপুরে রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর মহিপুরে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত (৫০) ব্যক্তির মর্দেহ উদ্ধার করেছে মহিপুর থানা পুলিশ। 

শুক্রবার (৪জুলাই) সকাল পৌনে সাতটার দিকে মৎস্যবন্দর মহিপুরের গ্রামীণ ব্যাংক সংলগ্ন কুয়াকাটা-কলাপাড়া মহাসড়কের পাশে পড়েছিল মরদেহটি। 

স্থানীয় বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, সকালে পায়চারি করার সময় রাস্তার পাশে এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখি। পরে কাছে গিয়ে ডাক দিলে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেই। মহিপুর থানা পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে । 

এ বিষয়ে মহিপুর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে। সনাক্তের কাজ চলছে। 

 মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা

মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ি গ্রামে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই সময়ে গুরুতর আহত অবস্থায় আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।


নিহতরা হলেন—জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তার ছেলে রাসেল মিয়া (২৮) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (২২)। পরিবারের চারজন সদস্য একসঙ্গে আক্রমণের শিকার হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তদন্ত শুরু করে।


এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি পূর্ব শত্রুতার জেরে ঘটতে পারে। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত চলছে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।


তিনি বলেন, আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার জবানবন্দি ঘটনার ক্লু উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


এদিকে নিহতদের পরিবার নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু গুঞ্জন রয়েছে যে, তারা মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো উচিত। কেউ অপরাধী হলেও তাকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারও নেই।


তিনি আরও বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি ঘৃণ্য অপরাধ এবং এ ঘটনার পেছনে যেই থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।


এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে তদন্ত শুরু করেছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।


নবীগঞ্জে ট্রাক- মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত -২ জন

নবীগঞ্জে ট্রাক- মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত -২ জন

এম. মুজিবুর রহমানঃ নবীগঞ্জ থেকে :

ঢাকা সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জে  সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন নারী যাত্রী ও অপরজন মাইক্রোবাস চালক।


বুধবার (২ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার মডেল বাজার এলাকায় এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—পাবনার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম এবং সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার মাইক্রোবাস শ্রমিক উপ-কমিটির সদস্য নাঈম আহমদ জয় (২৭)।


জানা গেছে, আনোয়ারা বেগম পরিবারসহ সিলেট থেকে ঢাকায় বাসা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। মাইক্রোবাসটি নবীগঞ্জের মডেল বাজার এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক নাঈম আহমদ জয় ও যাত্রী আনোয়ারা বেগম প্রাণ হারান।


শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, মাইক্রোবাসটিতে চালকসহ মোট ৬ জন ছিলেন। দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও বাকি ৪ জন আহত হয়েছেন। আহতদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।


হঠাৎ এই দুর্ঘটনায় নবীগঞ্জসহ পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মাঝে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হচ্ছে।

বিএনপিতে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা, ভোটারের আস্থা বাড়াচ্ছে জামায়াত

বিএনপিতে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা, ভোটারের আস্থা বাড়াচ্ছে জামায়াত

সিলেট বিভাগের ‘প্রবেশদ্বার’ খ্যাত হবিগঞ্জ দেড় দশক দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। রাজনীতির ময়দান কব্জা করে রাখায় জেলাটি পরিচিতি পেয়েছিল ‘দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ’ হিসেবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সুবাদে ফিরেছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ। আর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয়েছে ভোটের আমেজ। এ মাঠে দৌড়-ঝাঁপ দেখা যাচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্য ইসলামপন্থি ও সমমনা দলগুলোর নেতাদের।

জেলার ৯ উপজেলা নিয়ে গঠিত চারটি সংসদীয় আসন। এখানে সাড়ে ১৫ বছর দাপিয়ে বেড়ালেও গাঢাকা দিয়েছে সব আওয়ামীপন্থি। তাদের অনুপস্থিতিতেই চলছে নির্বাচনের আয়োজন। মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন অভ্যুত্থানপন্থি দলগুলোর নেতারা। তাদের মধ্যে বিএনপির প্রায় ২০ জন নেতা সরব আছেন, চেষ্টা চালাচ্ছেন দলীয় টিকিট নিশ্চিত করার। পাশাপাশি নানা কর্মসূচি নিয়ে যাচ্ছেন জনগণের কাছে। অন্যদিকে একক প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের আস্থা বাড়াতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও মানবিক নানা কর্মসূচি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা। খেলাফত মজলিসও ঘোষণা করেছে একক প্রার্থী।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল)

দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্তত সাত নেতা। তাদের মধ্যে প্রবাসীও আছেন। এবার দলীয় টিকিট পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল নান্টু, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা তালহা চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা দেওয়ান মোকাদ্দিম চৌধুরী নিয়াজ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতা মুখলিছুর রহমান, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাবির আহমেদ চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি এমএ রহিম। তাদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই প্রবাসী। তাদের পক্ষে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন অনুসারীরা।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ সুজাত মিয়া মাঠে থাকলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় জোটপ্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়াকে। তাতে কপালে ভাঁজ পড়ে সুজাতের, চলে যান লন্ডনে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে ফিরে মনোযোগ দেন নির্বাচনি প্রচারে। এবার দলের টিকিট পাবেন বলে জোর আশাবাদী তিনি।

ছাবির আহমেদ আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। অত্যাচার-হয়রানির পরও ছাড়েননি দল বা দেশ। এবার দল তার অবদানের মূল্যায়ন করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। তবে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গত ৫ আগস্টের পর দেশে ফিরে দলের শীর্ষ নেতাদের নজর কাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন, দৌড়-ঝাঁপ করছেন রাজনীতির মাঠে।

এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দলের সিলেট মহানগর শাখার সেক্রেটারি শাহজাহান আলী। তিনি বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের সন্তান। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি তিনি নানাভাবে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের শক্ত প্রতিন্দ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

খেলাফত মজলিসও এখানে জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল কাইয়ুম জাকীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তার পক্ষে নেতাকর্মীরা প্রচারও চালাচ্ছেন। তবে এনসিপি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং)

‘ভাটি অঞ্চল’ খ্যাত আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ধানের শীষের কান্ডারী হতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতা। তারা হলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ আলী মুকিব। তাদের মধ্যে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ডা. জীবন মাঠে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বহু হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে আহমেদ আলী ছিলেন প্রবাসে। ৫ আগস্টের পর দেশে ফিরে নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।

বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াত অ্যাডভোকেট শেখ মো. জিল্লুর রহমান আযমীকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে রাজধানীর হাতিরঝিল পূর্ব থানা জামায়াত আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি দিয়ে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন বলে তার দাবি।

একক প্রার্থী দিয়েছে খেলাফত মজলিসও। দলটির কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ (বড় হুজুর) ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে, তার দল বিএনপি জোটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনিই হতে পারেন ধানের শীষের পতাকাবাহক।

তবে এ আসনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি।

ডা. জীবন বলেন, ‘আমি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে ১৪ মামলার আসামি হয়েছি, জেল খেটেছি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাবস্থায় সিলেট বিভাগে সব পর্যায়ের নেতাকে নিয়ে সংগঠন সুসংগঠিত করতে রাত-দিন কাজ করেছি। সংগত কারণে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি বিএনপিকে নিশ্চিত উপহার দিতে পারব।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মাশরুরুল হক বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-২ আসনে দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুর রব ইউসূফীকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ)

তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি জেলার সবচেয়ে বড় নির্বাচনি এলাকা। একইসঙ্গে সদরের আসন হওয়ায় এখানে সবার নজর রয়েছে। একসময় এটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার হাত ধরে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তার মৃত্যুর পর ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টানা চারবার আসনটিতে এমপি হয়েছেন দলটির নেতা আবু জাহির। এতে ধীরে ধীরে আসনটি আওয়ামী লীগের কেল্লায় পরিণত হয়।

আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান হওয়ায় দলটির নেতারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে ফাঁকা মাঠে গোল করতে মরিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছ। তিনি নির্বাচনি এলাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখছেন। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীক পেলে তার জয় নিশ্চিত বলে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর বিশ্বাস।

এছাড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আহমদুর রহমান আবদাল, অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিমও দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

জি কে গউছ বলেন, ৪০ বছর ধরে দলের হয়ে কাজ করছি। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে জনগণের ভোটে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হয়েছি। কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করলেও কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এবারও দল আমাকে ধানের শীষ প্রতীক দিলে জনগণই প্রমাণ করবে আমার যোগ্যতা। বিএনপির টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

এ আসনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদকে দলটির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বেশ আগেই তার মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় প্রচারেও বেশ সুবিধা পাচ্ছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও মানবিক নানা কর্মসূচি নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ। ভোটাররাও আগ্রহভরে সাড়া দিচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

এবার খেলাফত মজলিস দলটির জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সারোয়ার রহমান চৌধুরীকে মনোনয়ন দিতে পারে বলে এলাকায় আলোচনা হচ্ছে। তবে অন্য কোনো দলের তেমন তৎপরতা নেই।

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর)

চা-বাগান এবং ভারত সীমান্ত ঘেঁষা চুনারুঘাট-মাধবপুর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ভোটের আসনটিতে বিগত নির্বাচনগুলোতে মূল ফ্যাক্টর ছিল চা-শ্রমিকদের ভোট। তাদের অধিকাংশ নৌকায় সিল মারতেন। আগামী নির্বাচনেও জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে তাদের ভোটেই। তাই যে প্রার্থী চা-শ্রমিকদের মন জয় করে ভোট বাগিয়ে নিতে পারবেন, তিনিই এ আসনে জয়ের মালা পরবেন।

এবার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দলটির পাঁচ নেতা। দলটির কেন্দ্রীয় সহ-স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, জেলার সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি সৈয়দ মো. ফয়সল, খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং সৈয়দ মো. ফয়সলের ছেলে সায়হাম গ্রুপের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মো. ইশতিয়াক নানা কর্মসূচি নিয়ে তৎপর আছেন।

সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ফয়সলের বেশ বয়স হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দলের টিকিট না পেলে সেই ঘাটতি পূরণে মাঠে নেমেছেন তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশতিয়াক। ইতোমধ্যে তিনি নানা কর্মসূচি ও তৎপরতার মাধ্যমে তৃণমূলের মন জয় করেছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামে শাম্মী আক্তার, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, মিজানুর রহমানের ভূমিকাও ছিল চোখে পড়ার মতো। শাম্মী আক্তার রাজধানীর পিচঢালা পথে আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন বলে তার দাবি। নির্বাচিত হলে জামায়াত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে বলে ভোটাররাও বিশ্বাস করছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের এই আসন থেকে তার দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।

স্কুলশিক্ষক আবদুল ওয়াদুদ তালুকদার বলেন, হবিগঞ্জ-৪ আসন কখনো বিএনপি পায়নি। সব সময় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির হাতে ছিল। এবার নতুন বাংলাদেশে ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন হবে। তাই সবার প্রত্যাশা থাকবে দলগু্লাে যেন সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও দুর্নীতিমুক্ত নেতাকে মনোনয়ন দেয়। অন্যথায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হবে না।

সাধারণ ভোটার আক্তার হোসেন আল হাদী বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার নতুন পরিবেশে সবাই ভোট উৎসব করতে চায়। সেই পরিবেশ যেন বজায় থাকে।

কাজী গোলাম মতুর্জা বলেন, ‘সুস্থ ও বাসযোগ্য দেশ প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও তা মেলেনি। আর কোনো রাতের ভোট ও ডামি নির্বাচন চাই না। অন্তর্র্বতী সরকার যেন একজন সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতাকে এমপি হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ করে দেয়Ñএটাই আমার প্রত্যাশা।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মহসিন চৌধুরী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হবেÑএটা প্রত্যাশা করি। একইসঙ্গে হবিগঞ্জের চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলেও আশা করি। এ জেলায় চা-শ্রমিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।